শিরোনামঃ
![]() ১৭-০৮-২০২৪ ১২:৪৩ অপরাহ্ন |
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট কুমিল্লা মোগলটুলী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন চাঁদপুরের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ (৬০)। তিনি হাসপাতালে ১০দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বাদ আছর নামাজে জানাজা শেষে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কাজীরগাঁও গ্রামে বড়বাড়ির নিজ পারিবারিক গোরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে তাঁর পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনকে শেষ বারেরমত দেখার জন্য তাঁর লাশ বড়বাড়ির আঙ্গিনায় নেয়া হয়। তখন সবার কান্নার আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এ সময় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুসহ কুমিল্লার আইনজীবী, বিএনপি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃবৃন্দ সেখানে তাদের শান্তনা দিতে উপস্থিত হন।
এ সময় সবার কাছে নিহত আবুল কালাম আজাদের বড় মেয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে জাপানিজ স্টাডিজ থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা নিশাত তাসনিম মম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, যারা আমাদের এতিম করে দিয়ে গেছে, আমার তাদের ফাঁসি চাই, আর কিছু চাইনা। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমার বাবা গুলি খাওয়ার পর ৪দিন পর্যন্ত হাসপাতালে জ্ঞান ছিল। এ অবস্থায় আমাদেরকে বাবা বলে গেছেন তাঁকে কে গুলি করেছেন।
বাবা আমাকে জানান, আমার বাবা ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে শুধু বলেছিল, ‘তোমরা আন্দোলন করে যাও, দেশকে বাঁচাও’ পরবর্তীতে তোমরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে আমি তোমাদের সব ধরনের আইনী সহযোগিতা দেব। আর এই ক্ষোভেই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান ও তার গ্যাং বাবার উপর হামলা করে। খুব কাছ থেকেই রায়হান শর্ট গান দিয়ে পেছন থেকে গুলি করে। এতে মেরুদন্ডসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলি লেগে তিনি সেখানেই লুটে পড়েন। পরে স্থানীয় একজন বাবাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। সেখান থেকে আমরা বাবাকে ঢাকার ইবনেসিনায় নিয়ে যাই। কিন্তু তারা পুলিশ কেইস দেখে সেখানে রাখেনি। পরে আমরা বাবাকে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। কিন্তু শরীরের বিভিন্নস্থানে বুলেটের কারণে তার ভেতরের অঙ্গগুলো নস্ট হয়ে গিয়ে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। ১০দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি আমাদের কাছ থেকে চির বিদায় নেন।
বাবার এই মৃত্যু আমারা দুবোন এবং আমাদের মা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। বাবা হারানোর শোকে মায়ের যেন হ্ঝানই ফিরছেনা। ফিরলেও চিৎকার করে কান্নায় আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
এদিকে তাদের শান্তনা দিতে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. মো. শরীফুল ইসলামসহ একদল আইনজীবী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি যান।
তখন মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, আমরা নিহত আবুল কালাম আজাদের পাশে শুরু থেকে রয়েছি। এ পর্যন্ত তাঁর হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা। তখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতারা তাঁর চিকিৎস্য ব্যয়ের দায়িত্ব নিলে আমরা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর কাছ থেকে ২ লাখ টাকাসহ আমরা আরও কিছু মিলে মোট ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধান করি। কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমরা আরও ১ লাখ টাকা তার পরিবারের কাছে দিয়ে যাই।
কুমিল্লার আরেক আইনজীবী মো.মোস্তফা জামান বলেন, আমরা নিহত আবুল কালাম আজাদ হত্যার ঘটনায় আমরা আইনজীবীরা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। যাতে করে নিহত আবুল কালাম আজাদ ন্যায় বিচার পান।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা ইউনিভার্সিটির অন্যতম সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, যেহেতু তাঁর পরিবারের হাল ধরার কোনো ছেলে নেই, আমরাই এখন তাঁর ছেলে হয়ে তার পরিবারের পাশে সব সময় থাকবো এবং তার বড় মেয়ের একটি চাকুরির ব্যবস্থা করার চেস্টা করবো।
ঠিকানা : Ibrahim Monjil, New Track Road (Bottola), Chandpur-3600.
মোবাইল : ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
ইমেল : chandpurbulletin@gmail.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলআমিন ভূঁইয়া