সুলতানা রাজিয়ার চোখে স্বপ্ন দেখছেন ডাকাতিয়া পাড়ের মানুষ
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০২:১৩ পূর্বাহ্ন

  

সুলতানা রাজিয়ার চোখে স্বপ্ন দেখছেন ডাকাতিয়া পাড়ের মানুষ

গাজী মমিন, নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদ্গঞ্জ
২৯-০৭-২০২৫ ০২:৫১ অপরাহ্ন
সুলতানা রাজিয়ার চোখে স্বপ্ন দেখছেন ডাকাতিয়া পাড়ের মানুষ

চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জে ডাকাতিয়া নদী দখল আর দূষণের কারণে আশপাশের পরিবেশ বিষ বাষ্পে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পুরো নদীতে কচুরিপানা জটে নৌযান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন নানান বিপাকে। নদীতে মাছ ধরে শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজারো জেলে পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। জেলা সদর থেকে উপজেলাটির নৌপথের দূরত্ব প্রায় ১৮ কি.মি.। বিশাল এরিয়া জুড়ে কচুরিপানা অপসারণে উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী থাকলেও কোটি- কোটি টাকা বাজেটের দোহাই দিয়ে এ উদ্যোগ কেউ গ্রহণ করেননি। অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি তিনি উপজেলার গল্লাক বাজার এলাকায় বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সফলও হয়েছে। এতে ডাকাতিয়া নদীপাড়ের হাজারো পরিবার উদ্যোগী ও কর্মঠ এই কর্মকর্তার মাধ্যমেই কচুরিপানা অপসারণের স্বপ্ন দেখছেন। সম্পত্তি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন সরকারি এ কর্মকর্তা।


৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প কৃষক সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ইত:মধ্যেই বেশ কিছু খাল সংস্কার করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনেছে। চলতি অর্থবছরেও আরো কিছু খালের সংস্কার হবে। কিন্তু এরবাইরেও সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় কচুরিপানার সীমাহীন জট। নদী, খাল, বিল সর্বত্রই কচুরিপানার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণে আশপাশের পরিবেশ বিষ বাষ্পে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পুরো নদীতে কচুরিপানা জটে নৌযান চলাচল ব্যহত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। নদীতে মাছ ধরে শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজারো জেলে পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এরথেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘকাল ধরে কচুরিপানা অপসারণের দাবী উপজেলাবাসীর থাকলেও বড় অংকের বাজেটের দোহাই দিয়ে এ উদ্যোগ কেউ গ্রহণ করেননি।


 অবশেষে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের দিয়ে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ২০২৫) ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫শতাধিক শিক্ষার্থী ৫টি স্থানে প্রাথমিক ভাবে বোরোপিট খাল থেকে কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু করবে। এর আগে টেস্টকেইস হিসেবে উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গল্লাক বাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সফলও হয়েছেন তিনি। তাই বড় পরিসরে কাজ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, স্বল্প খরচে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ নৌপথ দিয়ে পণ্য চান্দ্রা, টুবগী, গাজীপুর হয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে আসতো। বর্তমানে এ নৌপথে মাত্রাতিরিক্ত কচুরিপানা জটে নৌ-পথটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নদীতে ট্রলার চালক মফিজ বেপারীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, কচুরিপানার কারণে আমরা আগের মতো নৌপথ ব্যবহার করতে পারছিনা। যদি ঠিকই কচুরিপানা অপসারণ করা হয়, তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে নিজের কর্মে ফিরতে পারবো।


দুঃখ প্রকাশ করে পরেশদাস, মো. ইয়াকুব মিয়াসহ আরো কয়েকজন জেলে বলেন, আমরা আগে নদী ও খালে মাছ শিকার করে সুখে শান্তিতে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কচুরিপানার জটের কারণে  আগের মতো মাছ পাচ্ছিনা। এতে আমাদের পূর্বের পেশা বদল করে অন্য পেশায় যেতে হচ্ছে। কচুরিপানা সরালে আমরা আগের মতো পরিবার নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন দেখতাম।
সিআইপি কৃষক সংগ্রাম কমিটির সদস্য রহিমা আক্তার কলি বলেন, এ উপজেলার হাজারো পরিবারের মানুষের স্বপ্ন একদিন এ নদী ও খালগুলো কচুরিপানা মুক্ত হবে। সম্প্রতি ইউএনও সুলতানা রাজিয়া যে উদ্যোগ করেছেন, আমাদের স্বপ্ন অচিরেই বাস্তবায়ন হওয়ার আশা করছি।


উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, এ উপজেলাতে এক সময়ে মৎসচাষের গৌরব ছিল, নদীতে কচুরিপানা থাকার কারনে মাছ উৎপাদন কমেগেছে। কচুরিপানা অপসারণ করা হলে এ উপজেলায় মাছ চাষের গৌরব ফিরে আসবে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, নদী ও খালগুলোতে কচুরিপানা দেখে আমার নিজের কাছে খারাপ লাগছিল। যেখানে মানুষ বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করার কথা, সেখানে তারা ময়লা আবর্জনায় ভরা দূর্গন্ধযুক্ত বিষবাষ্প গ্রহণ করছে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে বড় বাজেটের প্রয়োজন, তবে লও ইচ্ছেকে পুঁজি করে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবীরা আমাকে সহযোগিতার যে আশ^াস প্রদান করেছে, তা অব্যাহত থাকলে আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কচুরিপানা মুক্ত হবে ডাকাতিয়া নদী ও খাল।

 


গাজী মমিন, নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদ্গঞ্জ ২৯-০৭-২০২৫ ০২:৫১ অপরাহ্ন প্রকাশিত হয়েছে
এবং 58 বার দেখা হয়েছে।

পাঠকের ফেসবুক মন্তব্যঃ
Loading...
  • সর্বাধিক পঠিত
  • সর্বশেষ প্রকাশিত

  ঠিকানা :   Ibrahim Monjil, New Track Road (Bottola), Chandpur-3600.
  মোবাইল :   ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
  ইমেল :   chandpurbulletin@gmail.com

সম্পাদক ও প্রকাশক: আলআমিন ভূঁইয়া